উখিয়া নিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৪/১২/২০২৪ ৮:১৩ এএম , আপডেট: ২৪/১২/২০২৪ ১০:৪৪ এএম

কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে গত পাঁচ বছরে দুই শতাধিক হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এসব হত্যাকাণ্ডের ৫৬ দশমিক ৪৩ শতাংশই হয়েছে মিয়ানমারের নিষিদ্ধ সংগঠন আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির (আরসা) হাতে। গত ১৩ নভেম্বর পর্যন্ত রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আরসা কর্তৃক ১১৪টি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ বাহিনীর আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) বিভিন্ন ইউনিটের প্রতিবেদনে এই তথ্য পাওয়া গেছে।

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নিয়োজিত এপিবিএনের কর্মকর্তারা বলেছেন, ক্যাম্প থেকে মিয়ানমারের দূরত্ব খুবই কম হওয়ায় দেশটি থেকে এ দেশে তুলনামূলকভাবে সহজে অস্ত্র ও মাদকদ্রব্য ঢোকার সুযোগ রয়েছে। এসব প্রতিরোধে স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা পরিস্থিতি উন্নত করতে সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয় জোরদার করতে হবে। একই সঙ্গে রোহিঙ্গাদের অভ্যন্তরীণ বিরোধ মীমাংসায় এজেন্সিগুলোকে সক্রিয় ভূমিকা রাখতে হবে। তাহলে সেখানে হত্যাকাণ্ডসহ অপরাধ কমবে।

২০১৮ সালে মিয়ানমার জান্তার দমনপীড়নের পরিপ্রেক্ষিতে ওই দেশ থেকে ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করে। জাতিসংঘের সহায়তায় তাদের বিভিন্ন ক্যাম্পে আশ্রয় দেওয়া হয়। আশ্রয়শিবিরগুলোতে শুরুর দিকে কোনো সহিংস ঘটনা না ঘটলেও দিন দিন অপরাধপ্রবণতা বেড়েছে। এপিবিএনের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, গত পাঁচ বছরে সেখানে ২০২টি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এক হিসাবে দেখা যায়, হত্যার সংখ্যা ক্রমেই বেড়েছে। ২০২০ সালে হত্যাকাণ্ড ঘটেছে ১০টি, ২০২১ সালে ৩০টি, ২০২২ সালে ৩১টি এবং ২০২৩ সালে ৭৩টি। চলতি বছর ১৩ নভেম্বর পর্যন্ত হত্যাকাণ্ড ঘটেছে ৫৮টি।

>আইনশৃঙ্খলা সংস্থার সমন্বয় জোরদারের তাগিদ
>>রোহিঙ্গাদের অভ্যন্তরীণ বিরোধ মীমাংসা প্রয়োজন

>>ফুটবল খেলার নামে  প্রতিনিয়ত উখিয়ার বিভিন্ন স্থানে রোহিঙ্গাদের বিশাল জমায়েত

এপিবিএনের তথ্য অনুযায়ী, সবচেয়ে বেশি (৪৮টি) হত্যাকাণ্ড ঘটেছে রোহিঙ্গা ক্যাম্প এলাকায় আরসার আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা নিয়ে। ৩৬টি খুন হয়েছে আরসার বিরোধিতা বা তাদের সহযোগিতা না করা নিয়ে। এ ছাড়া আরেক বিদ্রোহী সংগঠন রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশনকে (আরএসও) সমর্থন বা সহযোগিতা না করায় ১১ জন এবং আরএসওর তথ্যদাতার কাজ করায় আরসাসহ প্রতিপক্ষের হামলায় ৮ জন খুন হয়েছে। আধিপত্য বিস্তারে লক্ষ্যবস্তু করে আরসা, কামাল গ্রুপ ও তোতাবাহিনীর হাতে নিহত হয়েছে ১১ জন। দুই গ্রুপের মধ্যে আধিপত্য বিস্তারে গোলাগুলিতে মারা গেছে ১০ জন এবং পূর্বশত্রুতার জেরে হত্যাকাণ্ড ঘটেছে ১৫টি। বাকি হত্যাকাণ্ডগুলোর কারণের মধ্যে রয়েছে টাকা লেনদেন নিয়ে বিরোধ, ভাসানচরে পাঠানো নিয়ে নেতৃত্বের বিরোধ, প্রেমঘটিত দ্বন্দ্ব, পরকীয়ার অভিযোগ, পারিবারিক কলহ (১৯টি হত্যা) ইত্যাদি। ১৪টি হত্যার কারণ জানা যায়নি।

রোহিঙ্গা ক্যাম্পের হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে জানতে চাইলে এফডিএমএন (বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমার নাগরিক) বিষয়ক উপমহাপুলিশ পরিদর্শক (ডিআইজি) প্রলয় চিসিম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ক্যাম্পের ভেতরের পরিবেশ ও আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে এপিবিএন কাজ করছে। তবে ক্যাম্পের চারপাশে বিজিবি, কোস্টগার্ড, জেলা পুলিশ এবং রাষ্ট্রীয় সংস্থাগুলোর নজরদারি বাড়ানো গেলে সেখানকার আইনশৃঙ্খলা আরও ভালোভাবে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। গত দুই মাসে এপিবিএনের তৎপরতায় সহিংস ঘটনা কিছুটা কমেছে।’

শরণার্থী ত্রাণ ও পুনর্বাসন কমিশনের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সীমান্তবর্তী রাখাইন রাজ্যে আরাকান আর্মির সঙ্গে জান্তাবাহিনীর সাম্প্রতিক সংঘাতের জেরে নতুন করে গত কয়েক মাসে ৬৪ হাজার ৭১৮ জন রোহিঙ্গা বাংলাদেশে ঢুকেছে। অনেক রোহিঙ্গা লুকিয়েও প্রবেশ করছে। ইতিমধ্যেই ক্যাম্পগুলোতে প্রতিবছর ৩০ হাজার শিশু জন্ম নিচ্ছে। জনাকীর্ণ ক্যাম্পগুলোতে হত্যাকাণ্ড ছাড়াও অপহরণ, ধর্ষণ, মাদকের কারবার, ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের মতো অপরাধ ঘটছে। রোহিঙ্গাদের জনসংখ্যা ক্রমেই বেড়ে চলায় ক্যাম্পের বাইরে পুরো কক্সবাজার ও আশপাশের এলাকায়ও অপরাধের প্রবণতা বেড়েছে।

রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ক্রমবর্ধমান হত্যাকাণ্ড নিয়ে গতকাল রোববার বিকেলে আইনশঙ্খলা-সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক শেষে জানতে চাইলে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী খোদা বকস চৌধুরী বলেন, ‘আমার কাছে সেখানকার কোনো পরিসংখ্যান নেই। এ কারণে এ বিষয়ে বলা যাচ্ছে না।’ সুত্র: আজকের পত্রিকা

পাঠকের মতামত

নাইক্ষ্যংছড়িতে ইটভাটায় অভিযান

বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের আজুখাইয়ায় কে-আর-ই ব্রিক ফিল্ডে সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে ইটভাটার কার্যক্রম ...

সড়ক থেকে রোহিঙ্গা প্রতিরোধে তৎপর নেই হাইওয়ে পুলিশ রোহিঙ্গা চালকের নিয়ন্ত্রণে উখিয়ার বিভিন্ন সড়ক!

ফিটনেস বিহীন গাড়ি ও অদক্ষ রোহিঙ্গা চালকের দৌরাত্ম্য বেড়েছে উখিয়ায়। তার মধ্যে বেশিরভাগই ১৮ বছরের ...